জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রথম ধাক্কাটি লেগেছে পরিবহন খাতে। সাধারন জনতার যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসাবে বাসের ভাড়া বেড়েছে সর্বোচ্চ ২২% । অর্থাৎ ৩০০ টাকা ভাড়া হলে এখন তা ৬৬ টাকা বেড়ে ৩৬৬ টাকা হবে। পণ্যবাহী যানের ভাড়া এখনও নির্ধারণ না হলেও মালিকেরা ইতিমধ্যে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে শুরু করে দিয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধাক্কা নিত্যপণ্যের বাজারে আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে বলে —এমনটাই আশঙ্কা করছেন সাধারণ জনতা।
তবে এখনও নৌপথের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে লঞ্চের ভাড়া বাড়বে। এছাড়া বাড়বে নৌপথে পণ্য পরিবহনের ভাড়াও। লোকসানের বোঝা আর টানতে চায় না রেলওয়ে। তাই ভাড়া বৃদ্ধির চিন্তা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষেরো।
রাইড শেয়ারিং এ্যাপ চালুর পর মোটরসাইকেলও অনেকটা সাধারন মানুষের বাহনে পরিণত হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর রাইড শেয়ারিংয়েও ভাড়া বেড়েছে অনেকটা। মাসিক বাজার খরচের সঙ্গে জ্বালানি তেলের বাড়তি খরচ নিয়ে চিন্তায় প্রাইভেট কারের মালিকেরা।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের জ্বালানির ৬৫% ভোক্তা পরিবহন খাত। গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যান বাহনের প্রায় পুরোটাই ডিজেলনির্ভরশীল। এর মধ্যে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান,বাস,ট্রেন, লঞ্চ, পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান উল্লেখযোগ্য।
গণপরিবহনের মূল ব্যবহারকারী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে দেশের ইতিহাসে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি বেকায়দায় ফেলেছে সাধারন মানুষকে।
সরকার শুধু নন-এসি বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। বাকি যানবাহনের ভাড়া মালিক-শ্রমিকের ইচ্ছায় বাড়ে। তবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া সরকার ঠিক করে দিলেও তা মালিক-শ্রমিকেরা কখনোই তা মানেননি। তাই বলা চলে সরকার মালিক শমিতির কাছে অনেকটা জিম্মি কারন সরকার ভাড়া ঠিক করে দিলেও গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
গতকাল দিনভর পেট্রলপাম্প, বাস টার্মিনাল, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানুষের মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই ছিল আলোচনার প্রধান বিষয়। এমনকি বাসাবাড়ির দারোয়ান, কাজের মানুষ, গাড়ির চালক—সবারই একটি জিজ্ঞাসা ছিল , সেটি হচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয় কত বাড়বে?
রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে একটি বহুতল ভবনের গ্যারেজে দেখা যায়, দারোয়ান ও চালকেরা জটলা করে মুঠোফোনে পেট্রলপাম্পে জ্বালানি নিতে আসা মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষোভের ভিডিও দেখছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বলে ওঠেন, ‘এই চাপ মনে হয় নিতে পারব না। এত দিন ছিল বাজারে আগুন (মূল্যবৃদ্ধি)। এখন সব জায়গায় তা ছড়িয়ে পড়বে।
নতুন ভাড়া নির্ধারণ
গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি্র মূল্যবৃদ্ধির পর সারা দেশে বাসের ভাড়া গড়ে ২৭% বাড়ায় সরকার। তবে তখন পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। ৯ মাসের মাথায় আবারও দূরপাল্লার পথে ২২% শতাংশ আর নগরে বাসভাড়া বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬% শতাংশ।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৪০ পয়সা বেড়ে ২ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। বর্তমানে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৮০ পয়সা। এর সঙ্গে বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও ফেরির টোল তো থাকছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ নগর পরিবহনে প্রতি কিলো: ৩৫ পয়সা ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসে বর্তমানে ২ টাকা ৫ পয়সা। এটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই যথাক্রমে ১০ ও ৮ টাকা থাকছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ধারণার চেয়ে বেশি নির্ধারণ
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর বাস ও লঞ্চে ভাড়া কত বাড়তে পারে, তার একটি ধারণা দিয়েছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ২৯ পয়সা আর লঞ্চে ৪২ পয়সা বাড়তে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার নিজেদের হিসাব ধরে রাখতে পারেনি।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে ভাড়া নির্ধারণী বৈঠকে সড়ক মন্ত্রণালয় বাসভাড়া ৩০ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকনেতারা মানেননি। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা চলে বৈঠক। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ১০টার দিকে চূড়ান্ত ভাড়ার হার ঘোষণা করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। আজ রোববার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘যাত্রী ও মালিক সবার কথা বিবেচনা করে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ভাড়ার প্রস্তাব আমরা করেছি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন